বইমেলা ২০২৫: মুজিব বাদ?

লুৎফর রহমান রিটন: মুজিবকে বাদ দিতে চাওয়া এই প্রথম নয়। স্বাধীনতার পর থেকে, বিশেষ করে পঁচাত্তরের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত একই প্রচেষ্টা চলমান। ছোটদের সক্রেটিস থেকে শুরু করে ইন্টারপাশ বালক উপদেষ্টাসমূহ সকলেই মুজিব বাদ-এ লিপ্ত। ০৫ আগস্টের পর মুজিব বাদের শুরুতে মুজিবের ভাস্কর্যে হামলা ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ এবং ৩২-এর মুজিবস্থান মুজিববাড়িতে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ৩২ নম্বরের সকল মুজিবস্মৃতি নিশ্চিহ্ন করার পর পাঠ্যবই থেকে মুজিবকে বাদ দেয়া হয়।

অতঃপর ২০২৪ এ-ঘোষিত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত দু’জন লেখককে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তাঁরা মুজিবকে নিয়ে লিখেছেন বলে। অর্থাৎ এঞ্জিও সরকার মনে করছে মুজিবকে নিয়ে বই লেখা যাবে না! এঞ্জিও সরকার মনে করছে মুজিবকে নিয়ে বই লেখা অপরাধ! এঞ্জিও সরকার মনে করছে মুজিবকে নিয়ে বই লিখলে সেই লেখককে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেয়া যাবে না!
বেশ।

মেনে নিলাম। কিন্তু সামান্য খটকাসহ।
মুজিবকে নিয়ে লেখার কারণে শুধু ফারুক নওয়াজ এবং মোহাম্মদ হাননানকে পুরস্কারের তালিকা থেকে বাদ দিলেই ল্যাঠা চুকে যাচ্ছে না কিন্তু! তালিকায় বহাল থাকা পুরস্কার প্রাপ্ত রেজাউর রহমানও তো মুজিবকে নিয়ে লিখেছেন,গল্প! ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে কথাপ্রকাশ প্রকাশিত আখতার হুসেন সম্পাদিত ‘জনকের মুখ’ নামের সংকলনে ৫৫জন লেখকের ৫৫টি গল্পের একটি গল্প পুরস্কারকর্তন তালিকা থেকে বেঁচে যাওয়া এই রেজাউর রহমানের! গল্পের নাম উল্কাপাত। পৃষ্ঠা নম্বর ১১৬।

অন্য দু’জনকে বাদ দিলে এই ভদ্রলোকও তো বাদ পড়ার কথা! কিন্তু তাঁকে বাদ দেয়া হলো না কেনো? তিনি প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের ভ্রাতা বলে? লেখক রেজাউর রহমানকে দায়মুক্তি দেয়া হলো প্রথম আলো কোটায়? জানি না।মুজিবকে নিয়ে বাংলাদেশের প্রায় সব লেখকই লিখেছেন। হাতে গোণা কয়েকজন বাদে। মুজিবকে নিয়ে লিখলেই যদি ঘ্যাঁচাং করতে হয় তাহলে তো বাংলা একাডেমিও ঘ্যাঁচাং থেকে রেহাই পাবার কথা নয়!

হালে পল্টি খাওয়া বাংলা একাডেমি কবি নূরুল হুদার তিন বছরের শাসনামলেই কিন্তু মুজিবকে নিয়ে প্রকাশ করেছে বহু সংখ্যক বই! খোদ নূরুল হুদার সম্পাদনাতেই প্রকাশিত হয়েছে প্রায় পনেরো-কুড়িটি বই।
তাহলে বাংলা একাডেমিকে রেহাই দেয়া হলো কোন বিবেচনায়? মুজিবকে নিয়ে বই প্রকাশের অপরাধে বাংলা একাডেমির কবল থেকে একুশের বইমেলা করার অধিকারটাই তো কেড়ে নেয়া উচিৎ ছিলো একই তরিকায়!

তার মানে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে পল্টি খাওয়া বাংলা একাডেমিকেও! শুধু কি বাংলা একাডেমি! মুজিব বাদ প্রকল্প সফল করণ অভিযানে আমাদের সংস্কৃতি উপদেষ্টা জনাব মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও তো তাহলে ঘ্যাঁচাং-এর কবলে পড়ার কথা! কারণ নিকট অতীতে তিনিও মুজিবকে নিয়ে লিখেছেন বেশ কয়েকবার। প্রনিধানযোগ্য বলে জনাব ফারুকীর দু’টি ফেসবুক স্ট্যাটাস এখানে উদ্ধার করা যায়–

২০১৭ সালের ১৫ আগস্ট তিনি লিখেছিলেনঃ–
[ ‘ইতিহাস বড় মানুষকে পরম মমতায় নির্মাণ করে। এবং বড় মানুষও ততোধিক মমতায় ইতিহাসকে নির্মাণ করেন।
যেমন বঙ্গবন্ধু।
আশা করি দ্রুতই বঙ্গবন্ধুকে ভাগাভাগির হাত থেকে রক্ষা করবো। বড় মানুষ সবার হয়।’ ১৫ আগস্ট ২০১৭]

> ২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট তিনি লিখেছিলেনঃ–
[ ‘কেউ বাঙালি বেশি-মুসলমান কম, কেউ মুসলমান বেশি-বাঙালি কম, এইরকম ভারসাম্যহীনতার পাথারে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন এক বিশাল ভারসাম্য হয়ে। এই জনপদে বঙ্গবন্ধুর বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার পেছনে এটা একটা বিশাল কারণ।
আর দ্বিতীয় কারণটা হইলো উচিৎ কথা বলতে তিনি বাপরেও ছাড়ার লোক ছিলেন না!
–বঙ্গবন্ধু বিষয়ে দু’টি কথা, জাস্ট ইন কেস উই ফরগেট!’ ১৫ আগস্ট ২০১৯]

অতঃপর এঞ্জিও সরকারের সংস্কৃতি মণত্রণালয়ের উপদেষ্টা হবার পর সচিবালয়ে নিজের কক্ষে প্রবেশ করে প্রথমেই তিনি শেখ মুজিবের ছবিকে অপসারণ করেছিলেন!

সময় নিউজ জানাচ্ছেঃ–

[ ‘সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে শেখ মুজিবের ছবি সরালেন উপদেষ্টা ফারুকী।’
সময় নিউজ ১৩ নভেম্বর ২০২৪]

এক্ষণে মুজিব বাদ সম্পর্কিত আমার একটি পুরনো ছড়া এখানে উদ্ধার করিঃ–
[ ‘যে সব বঙ্গেতে জন্মি হিংসে মজিবরে
সে সব কাহার জন্ম? নির্ণয় কে করে!
যে সব বঙ্গেতে জন্মি ধ্বংসে মজিবরে
মৃত্তিকার অভিশাপ তাহাদের তরে!’ ]
‘দেখেন আপনারা যা ভালোমনে করেন।’

-অটোয়া ০২ জানুয়ারি ২০২৫

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *